মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম এবং আমাদের সংবিধান প্রসংঙ্গ: অ্যাডভোকেট সোয়েব রহমান

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামই প্রথম স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে। মৌলিক অধিকারকেই মানবাধিকার বলে।

ইসলামে মানবাধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বোঝানো হয়, যেগুলো স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে প্রদান করেছেন। পৃথিবীর কেউ তা রহিত করার অধিকার রাখে না। এ অধিকার কখনো রহিত হওয়ার নয়। ইসলামে মানবাধিকারের ধারণা কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তা প্রতিটি মুসলমানের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ অংশও বটে। সর্বশেষ ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা: ছিলেন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহানায়ক। তিনি যে জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা ছিল ভারসাম্যপূর্ণ ও সর্বশ্রেণীর মানুষের জন্য কল্যাণকর। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানবতার মহান বন্ধু। মানবাধিকার বলতে যতগুলো বিষয়কে গণ্য করা হয়, ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় এর প্রতিটির ব্যাপারেই অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার অধিকার দিয়ে মহানবী সা: বলেছেন, ‘অমুসলিমদের জীবন আমাদের জীবনের এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতোই।’ তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, জীবনের নিরাপত্তা, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি অধিকার রাসূল সা: নিশ্চিত করেছেন। মদিনা সনদ অমুসলিমদের মদিনায় বসবাসের অধিকার দিয়েছিল। সর্বক্ষেত্রে মানুষের মূল্য-মর্যাদা ও মানবাধিকারের যে সার্বজনীন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের ইতিহাসে তা বিরল, অভূতপূর্ব। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নীতি-দর্শনের কয়েকটি দিকের উপর আলোকপাত করেলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সর্বক্ষেত্রে মানুষের মূল্য-মর্যাদা ও মানবাধিকারের যে সার্বজনীন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের ইতিহাসে তা বিরল, অভূতপূর্ব। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নীতি-দর্শনের কয়েকটি দিকের উপর আলোকপাত করেলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

মানুষের বেঁচে থাকার ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের জীবনের অধিকার ও জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছেন। নরহত্যা যেখানে নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল সেখানে নরহত্যাকে জঘন্য অপরাধ হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেছেন,

“ সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বানানো এবং মানুষকে হত্যা করা…..। [আল্-হাদীস, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮৭১]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“ কোনো মু‘আহাদকে (মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থানরত চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিককে) হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না। যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ ৪০ বছর দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়। [আল্-হাদীস, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৬৬]

বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে (যাকে মানবাধিকারের আদি সনদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষকে সম্বোধন করে বলেছেন,

“ নিশ্চয়ই তোমাদের পরস্পরের জীবন, সম্পদ এবং সম্ভ্রম তোমাদের (অবৈধ হস্তক্ষেপ থেকে) পবিত্র, যেরূপ তোমাদের এই দিন পবিত্র তোমাদের এ মাসে তোমাদের এ শহরে।[আল্-হাদীস, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭, ১০৫, ১৭৩৯]

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং আত্মহত্যাকারী তার নিজের জীবন নিজেই শেষ করে দেওয়ার শাস্তি হিসেবে আখেরাতে আত্মহত্যার অনুরূপ পন্থায় শাস্তিভোগ করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৫১-১২৫৩]

জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগে, বিশেষত আরবদের নবজাতক বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের জন্মলাভের পরপরই দারিদ্রের ভয়ে হত্যা বা জীবন্ত প্রোথিত করার রেওয়াজ প্রচলিত ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসলামী সমাজে শিশু হত্যার এ জঘন্য প্রবণতাকে দণ্ডযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করে পবিত্র কুরআনের প্রত্যাদেশের মাধ্যমে[কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানকে হত্যা করো না, তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা এ জঘন্য অপরাধ’’। সূরা আল-ইসরা/বনী ইসরাইল: ৩১]
শিশুদের জীবনের অধিকার ও নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করা হয়।

বিবাহ ও পরিবার গঠনের অধিকার

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন দর্শনে সমাজের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তিকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। ইসলামে বিবাহ সমভাবে একটি অধিকার ও ধর্মীয় দায়িত্ব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“ আর আমি নারীদের বিবাহ করি। সুতরাং যে আমার সুন্নাহ্ থেকে বিমুখ হল সে আমার আদর্শভুক্ত নয়।[আল হাদীস, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩]

প্রকৃতপক্ষে ইসলামে ‘বিবাহ’ কেবলমাত্র জৈবিক চাহিদা পূরণের পন্থাই নয়, বরং পারস্পরিক ভালবাসা, সমঝোতা, সমবেদনা ও নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রবর্তিত বিবাহ ব্যবস্থা এমন একটি সামাজিক চুক্তি যাতে নারী ও পুরুষ উভয়ের সম্মত বা অসম্মত হবার সমান অধিকার স্বীকৃত। বিবাহের পাশাপাশি পারিবারিক জীবনকে ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেহেতু স্বামী-স্ত্রীই হল পরিবারের মূল ভিত্তি এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের উপরই প্রাথমিকভাবে পারিবারিক জীবনের শান্তি ও সুখ নির্ভর করে, তাই পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে, এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করা হয়েছে:

“ তাঁরা (স্ত্রীগণ) হবে তোমাদের (স্বামীদের) ভূষণ আর তোমরা (স্বামীগণ) তাদের (স্ত্রীদের) ভূষণ।[সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৭]

সম্পত্তির মালিকানার অধিকার

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত ইসলামী অর্থব্যবস্থা সমাজতন্ত্রবাদ বা পুঁজিবাদ কোনটিকেই পুরোপুরি সমর্থন করে না বরং তা একটি কল্যাণ রাষ্ট্রীয় ধারণাকে সমর্থন করে। এখানে ব্যক্তির জন্য সম্পত্তির অপ্রকৃত মালিকানা স্বীকৃত। তবে তা এতটাই নিয়ন্ত্রিত যে, ব্যক্তি এখানে সম্পদ উপর্জনের লাগামহীন স্বাধীনতা লাভ করে না। ইসলামী সমাজের সকল সম্পদের প্রকৃত মালিকানা আল্লাহর। মানুষ দায়িত্বপ্রাপ্ত (trustee) হিসাবে এর অর্জন, ভোগ ও বণ্টনের অধিকার লাভ করে। আল-কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে,

“ তাদের সম্পদে প্রার্থনাকারী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।[সূরা আল-মা’আরিজ: ২৪-২৫]

দান, খয়রাত, সদকা, যাকাত, ফিতরা প্রভৃতির মাধ্যমে বর্ধিত সম্পদের বিলি-বন্টন করে ইসলামে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক অবস্থার কথাই কেবল বলা হয় নি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনে কার্যকরভাবে তা প্রতিষ্ঠাও করেছেন।

স্বাধীনভাবে চলাচল, বসবাস, রাজনৈতিক আশ্রয় ও নাগরিকত্ব লাভের অধিকার

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রবর্তিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে রাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে স্বাধীনভাবে চলাচল ও বসবাসের অধিকার প্রদান করে। একই ভাবে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের বাইরে যাওয়া ও অন্য রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকারও প্রতিটি ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে একটি ‘বিশ্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা’ ধারণায় বিশ্বাসী ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাষ্ট্রদর্শন অনুযায়ী সমগ্র বিশ্ব আল্লাহর রাজত্বস্বরূপ- যা তিনি সকল মানুষের চলাচল ও বসবাসের জন্যে অবারিত করে দিয়েছেন।

নিপীড়ন-নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক আচরণ থেকে মুক্তি লাভের অধিকার

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো ব্যক্তিকে শারীরিক-মানসিক শাস্তিদান বা তাকে কষ্ট দেওয়াকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন,

“ প্রকৃত মুসলিম হচ্ছে সে ব্যক্তি, যার কথা বা হাত (কাজের নিপীড়ন) থেকে মুসলিমগণ নিরাপদে থাকেন।[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৮৪]

এমনকি এক্ষেত্রে অমুসলিম নাগরিকগণের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত দৃঢ় ভাষায় তিনি বলেছেন,

“ যদি কোনো মুসলিম অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার উপর সাধ্যাতীত বোঝা (জিযিয়া বা প্রতিরক্ষা কর) চাপিয়ে দেয় অথবা তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষাবলম্বন করব।’’[ আল-বায়হাকী, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং ৫৭৫০]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো অপরাধের জন্য অন্যকে দণ্ড দেওয়ার যুগ যুগ ধরে প্রচলিত রেওয়াজও চিরতরে রহিত করে দেন। বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক অভিভাষণে তিনি বলেন,

জেনে রাখ, কারো অপরাধের জন্য তারা নিজেকেই দণ্ড বহন করতে হবে। সুতরাং পিতার অপরাধের জন্য পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে জন্য পিতাকে দায়ী করা যাবে না।[আল-হাদীস, সুনান ইবনু মাজা, হাদীস নং ২৬৬৯ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২১৫৯]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ঘোষণার মূলে ছিল কুরআনের সেই বাণী,

“ প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী।[সূরা আত-তূর: ২১]

“ প্রতিটি ব্যক্তি যা অর্জন করে তা শুধু তারই উপর বর্তায়, আর কেউ অন্যের বোঝা বহন করে না।[সূরা আল-আন‘আম : ১৬৪]

অবাধ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অধীনে ন্যায়বিচার লাভের অধিকার

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রবর্তিত রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক-সামাজিক পেশাগত মর্যাদা নির্বিশেষে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক একটি নিরপেক্ষ, অবাধ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অধীনে স্বাভাবিক ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার লাভ করে। মূলত ন্যায়বিচার ধারণার উপর ইসলামে এতটা গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, কুরআনে প্রায় ষাটটি আয়াতে এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন একটি আয়াতে বলা হয়েছে,

“ হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক, আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে, যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকট আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়।[সূরা আন-নিসা: ১৩৫]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিষ্ঠিত ইসলামী খিলাফতের শাসনামলে ইসলামে বিচার ব্যবস্থা যা শাসক গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপমুক্ত, স্বাধীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে, তা ছিল মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মানবতাবোধ ও মানবাধিকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উৎসারিত।

শান্তি, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠায়

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট ভাষায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন যে,

“ আমি তোমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্যে রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।[ সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৭]

কুরআনের এ বাণী পরিপূর্ণভাবে সত্যে পরিণত করেছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সমাজ, রাষ্ট্র ও সমগ্র মানব জাতির ভ্রাতৃত্ব, শান্তি, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় তিনি যে অনন্য সাধারণ উদাহরণ রেখে গেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা আজো অদ্বিতীয় এবং সর্বজনস্বীকৃত অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে পরিগণিত। কেননা তিনি কেবল মুসলিমদের আদর্শ ছিলেন না, ছিলেন গোটা মানব জাতির আদর্শ। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এই মর্মে ঘোষণা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন,

“ বলুন (হে নবী), হে মানবজাতি, আমি তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর রাসূল।[সূরা আল-‘আরাফ: ১৫৮।]

দয়া, ক্ষমা ও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায়

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু, ক্ষমাশীল ও কোমল। দয়া, ক্ষমা, শান্তি ও সাম্যের প্রতিরূপ এই মহামানব স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন,

“ যে মানুষকে দয়া করে না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দয়া করেন না।[হাদীস নং ৭৩৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১৭২]

এখানে কেবল মুসলিমদের কথাই নয় বরং গোটা মানব জাতির কথা বলা হয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি দয়া ও ক্ষমা প্রদর্শনকে তিনি নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। অন্য একটি হাদীসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“ যমীনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া করা, তাহলে উর্ধ্বালোকে যিনি আছেন তিনি তোমার প্রতি সদয় হবেন।[সুনান আবি দাউদ, হাদীস নং ৪৯৪৩, সুনান আত-তিরমিযি, হাদীস নং ১৯২৪।

অন্যদিকে শ্রমিক অধীনস্থ কর্মচারী ও চাকর-চাকরানীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করা, তাদেরকে নিজেদের অনুরূপ খাওয়া-দাওয়া প্রদান, পোশাক-আশাক দেওয়া ও বিশ্রাম ইত্যাদির ব্যবস্থা করতেও তিনি বারংবার তাগিদ দিয়েছেন। বস্তুত বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রমিকদের সব প্রকার বঞ্চনা, অত্যাচার, নিপীড়ন আর গ্লানির অবসান করে এমন সব শ্রমনীতির প্রবর্তন করে গেছেন যার সিকি শতাংশও জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা (আই.এল.ও) বিগত ১১৮ বছর ধরে মে দিবস উদযাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি।

তাঁর এই গুণাবলী ও দৃষ্টিভঙ্গিতে মুগ্ধ বিখ্যাত দার্শনিক, সাহিত্যিক জর্জ বার্ণাড শ’ তাই বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি,

“If all the world was united under one leader, Mohammad would have been the best fitted man to lead the peoples of various creeds, dogmas and ideas to peace and happiness.”

নারী অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়

নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। নারী মুক্তির প্রবক্তা হিসাবে আমরা হয়ত কেট মিলে (Kate Millet), জার্মেন গ্রীয়ার (Germaine Greer) বা অ্যানী নূরাকীন (Anee Nurakin) প্রমুখের নাম জানি; এক্ষেত্রে আরো উল্লেখ করা হয় মেরী উলস্টন, অ্যানী বেসামন্ত, মার্গারেট সাঙ্গাঁর, সুলতানা রাজিয়া, বেগম সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ মহিলাদের সংগ্রামের ইতিহাস। কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে নারীর অধিকার ও মর্যাদার জন্য যে ব্যক্তি প্রথম সোচ্চার হয়ে ওঠেন, নারীকে সংসার ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ হিসাবে যে ব্যক্তি প্রথম স্বীকৃতি দেন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নারীর অধিকার পরিপূর্ণ আকারে যে ব্যক্তি প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন, সত্যিকার অর্থে যিনি নারী জাগরণ ও নারী মুক্তির প্রবক্তা, তিনি হচ্ছেন ‘একজন পুরুষ’ এবং তিনি আর কেউ নন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একথা আদৌ অত্যুক্তি হবে না যে, জীবনে অন্য কিছু না করলেও শুধুমাত্র নারী জাগরণের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানই বিশ্ব মনীষায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুউচ্চ আসনে সুদৃঢ়ভাবে অধিষ্ঠিত করবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম পদক্ষেপ ছিল কন্যা শিশু হত্যা বন্ধ করা। তিনি বরং কন্যা শিশুর লালন-পালনকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন এবং নিজেও তাঁর কন্যাদের লালন-পালন কালে সেটা করে দেখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন,

“ (পুরুষদের জন্যে) দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে উত্তম স্ত্রী।’’[মুসলিম, ১৪৬৭]

অন্যদিকে নারীকে তিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পরে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদার অধিকারী করেছেন। হাদীসে এসেছে,

“ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে কে আমার কাছে সর্বোত্তম সম্মান, মর্যাদা ও সদ্ব্যবহার পাবার যোগ্য? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সাহাবী আবারো জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বাবা।[আল-হাদীস, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭১]

নারী মুক্তির দিশারী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে শুধু বাঁচিয়ে রেখে মর্যাদা দিয়েই ক্ষান্ত হন নি, তিনি নারীকে যথাযথ অধিকার দিয়ে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীকে তিনি অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাগত, আইনগত এবং ধর্মীয় সব দিক দিয়ে তার অধিকার নিশ্চিত করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তসমূহকে সংক্ষেপে এভাবে উল্লেখ করা যায় :

ক. নারীকে পিতার সম্পত্তিতে, স্বামী, সন্তান ও মায়ের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী ধার্য করা হয়েছে।
খ. বিয়ের সময় নারীকে মোহরানা বা দেনমোহর প্রাপ্তি আবশ্যিক করেছেন এবং তা আদায় না করার বা তা থেকে জোর করে ব্যয় করার অধিকার স্বামী, পিতা বা ভাই কাউকে দেওয়া হয় নি।
গ. নারীকে স্বামী নির্বাচনের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে কোথাও বিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে একজন অকর্মন্য, অত্যাচারী স্বামী থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের পূর্ণ অধিকার নারীকে দেওয়া হয়েছে। একই সাথে বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারীকে ২য় বিবাহের বা পুনঃবিবাহের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
ঘ. দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইনে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন নি তিনি।
ঙ. বিদ্যাশিক্ষা করা বা জ্ঞানার্জন করার ব্যাপারে নারীকে পুরুষের মতই সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম (নরনারী) এর উপর ফরয বা অবশ্য কর্তব্য’’।
চ. অত্যাচার, অপমান, অশালীনতা ও অবমাননা থেকে নারীকে রক্ষার জন্যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের পোশাক পরিধানে ও জনসমক্ষে চলাফেরার সময় একটি অনুসরণীয় পোষাক-বিধি (Dress Code) মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।

নির্দ্বিধায় তাই বলা যায়, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানব মর্যাদা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।

মানবাধিকার সম্পর্কে আলোচনা করার শুরুতে ‘মানবাধিকার’ শব্দটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ‘মানবাধিকার’ পদটিতে ‘মানব’ ও ‘অধিকার’ এই দুটি শব্দ একিভূত হয়েছে । ‘মানব’ শব্দটি অবশ্যই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কে বোঝায় আর ‘অধিকার’ হলো কিছু স্বার্থ যা আইনগত বা নৈতিক নিয়ম-নীতি দ্বারা সংরক্ষিত করা হয়। নিম্নে এতদুভয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

অধিকার (Rights): আইন বিজ্ঞানের ভাষায়, অধিকার হলো মূলতঃ কিছু স্বার্থ যেগুলো অধিকারের নৈতিক বা আইনগত নীয়ম-নীতি দ্বারা সংরক্ষিত হয়। স্বার্থ হলো মানুষের কিছু সুবিধাজনক অবস্থা যার প্রেক্ষিতে অন্যদের কোন কর্তব্য নেই। কিন্তু যখন এই সুবিধাজনক অবস্থার প্রেক্ষিতে অন্যদের কর্তব্য থাকে তখন তাকে অধিকার বলা হয়।

টি. এইচ. গ্রীন বলেছেন-“অধিকার হলো কিছু বাহ্যিক অবস্থা যা ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য”

Professor Laski বলেন- “My rights are built always upon my function to the well being of society; and the claim I make must, clearly enough, be claims that are necessary to the proper performance of my function. My demands upon society are demands which ought to receive recognition because a recognizable public interest is involved in their recognition.”

President Nyerere, of United Republic of Tanzania, remarked, “We shall try to use the Universal Declaration of Human Rights as a basis for both our external and internal policies.”

Nelson Mandela said, “It is an ideal hope to live for and achieve, but it is an ideal for which I am prepared to die”.

Negros Oriental Jose announced, “No cause is more worthy than the cause of human rights” and “They are what make man and woman human.”

His Holiness the XIV Dalai Lama of Tibet reminded human rights workers that “the protection of these rights and freedoms are of immense importance, both for the individuals affected and for the development of the society as a whole”.

Robert L. Barker বলেন, Human Rights are the opportunity to be accorded the some progressive and obligations as to race, sex, language, or religion. অর্থাৎ মানবাধিকার হলো কিছু সুযোগ-সুবিধা, যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান।

আইনগত অধিকার (Legal Rights): আইনগত অধিকার হলো সে অধিকার যা আইনের নীতিসমূহ দ্বারা স্বীকৃত ও সংরক্ষিত, যা ভঙ্গ করলে ঘটে যাবে আইনগত ত্রুটি এবং যাকে সম্মান দেখানো হবে আইনগত কর্তব্য। এটা রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান বা আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়। এটা কেউ লংঘন বা অমান্য করলে তা দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। যেমন- আমার পথ চলার অধিকার, ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন করার অধিকার। এ কাজে কেউ বাধা দিলে তার প্রতিকার পাওয়া যাবে। কাজেই বৃহত্তর অর্থে আইনগত অধিকার বলতে আমরা সেই অধিকারগুলোর কথা বলতে পারি যা কেবল রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনের আওতায় রচিত।

মানবাধিকার (Human Rights): উপরে আলোচিত অধিকার এবং আইনগত অধিকারই মূলত মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা।

বাংলাদেশ সংবিধানে বর্ণিত জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ:

সমাজে মর্যাদাপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে একজন মানুষের যেসব অধিকার দরকার, সেগুলো মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। একটি রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এসবের মধ্য থেকে কিছু অধিকারকে মৌলিক হিসেবে ঘোষণা করে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মৌলিক অধিকার ভঙ্গ হলে রাষ্ট্র প্রতিকার দিতে বাধ্য থাকে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, মানবাধিকার মানুষের জন্মগত। আর মৌলিক অধিকার হলো আইনিভাবে স্বীকৃত।

বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ বাংলাদেশ সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদগুলো মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট। তৃতীয় ভাগের শুরুতে অর্থাৎ ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো আইন করা যাবে না। আর যদি করা হয় তবে তা বাতিল হয়ে যাবে। সরকার বা মন্ত্রিপরিষদ ইচ্ছা করলেই মৌলিক অধিকার পরিপন্থী আইন তৈরি করে এর ব্যত্যয় ঘটাতে পারবে না। অবশ্য কিছু কিছু অধিকার সংবিধানের ১৪১(ক), ১৪১(খ) ও ১৪১(গ) অনুচ্ছেদের আওতায় দেশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবনে হুমকির কারণে জরুরি অবস্থায় স্থগিত ঘোষিত হতে পারে।

মৌলিক অধিকার দৈহিক ও মানসিক সীমানা সঙ্কোচনকারী কৃত্রিম বাধা অতিক্রম করে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের আবহে নাগরিকদের জীবন মর্যাদাপূর্ণ করে। আধুনিক বিচারব্যবস্থা হলো বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ব্যাষ্টি স্বার্থদ্বন্দ্বের মধ্যে ন্যায়বিচারের ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য সভ্যতার এক মহৎ সৃষ্টি। এসব সংঘাত অভিন্ন কল্যাণের লক্ষ্যে নাগরিকদের শান্তিপুর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সহাবস্থানের জন্য সমাজে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাকে কঠিন করে তোলে। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম রক্ষাকবচ।

আইনের দৃষ্টিতে সমতা :
সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার (সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ)

ধর্ম প্রভৃতির কারণে বৈষম্য বিলোপ :
কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী ও পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী ও পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে অনুরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না।(সংবিধানের অনুচ্ছেদ-২৮)

সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা:
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা লাগবে। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না কিংবা সেক্ষেত্রে তার বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না (সংবিধানের অনুচ্ছেদ-২৯)

বিদেশী খেতাব প্রভৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ:
রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতি ছাড়া কোন নাগরিক কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নিকট হতে কোন উপাধি, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করবে না।(সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩০)

আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার:
আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ছাড়া এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।(সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩১)

জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ :
আইনানুযায়ী ছাড়া জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না।(সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩২)

গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ: গ্রেফতারকৃত কোন ব্যক্তির যথাসম্ভব শিগগির গ্রেফতারের কারণ জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শের ও তাকে দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুবিধা হতে বঞ্চিত করা যাবে না। গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিষ্ট্রেট-এর সম্মুখে গ্রেফতারের চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের স্থান হতে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে হাজির করা হবে এবং ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ ছাড়া তাকে এর অতিরিক্ত সময় প্রহরায় আটক রাখা যাবে না। (সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৩)

জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ:
সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ এবং এই বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। (সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ)

বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ:
অপরাধের দায়মুক্ত কার্য সংগঠনকালে বলবৎ ছিল, এমন আইন ভঙ্গ করার অপরাধ ছাড়া কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না এবং অপরাধ সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে দন্ড দেয়া যেত তাকে তার অধিক বা তা থেকে ভিন্ন দন্ড দেয়া যাবে না। এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিক বার ফৌজদারীতে সোপর্দ ও দন্ডিত করা যাবে না। ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী হবে। কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনার দন্ড দেয়া যাবে না কিংবা কারো সাথে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। (সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ)

চলাফেরার স্বাধীনতা:
জনস্বার্থে আইনের মাধ্যমে আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধে চলাফেরার, যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। (সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ)

সমাবেশের অধিকার:
জন শৃক্মখলা বা জন স্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের মাধ্যমে আরোপিত যুক্তিসংগত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার, জনসভায় ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। (সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ)

সংগঠনের স্বাধীনতা:
জনশৃক্মখলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের মাধ্যমে আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। (সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ)

চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা:
চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃক্মখলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনের প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের মাধ্যমে আরোপিত যুক্তিসংঘত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। (সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ)

পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা:
আইনের মাধ্যমে আরোপিত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের কিংবা কারবার বা ব্যবসা পরিচালনার জন্য আইনের মাধ্যমে কোন যোগ্যতা নির্ধারিত হয়ে থাকলে অনুরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায় পরিচালনার অধিকার থাকবে। (সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদ)

ধর্মীয় স্বাধীনতা:
আইন, জনশৃক্মখলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম সংক্রান্ত না হলে তাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করতে হবে না। (সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ)

সম্পত্তির অধিকার:
আইনের মাধ্যমে আরোপিত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলিব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ছাড়া কোন সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলিব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ছাড়া কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ব বা দখল করা যাবে না। (সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদ)

গৃহ ও যোগাযোগ রক্ষণ:
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃক্মখলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জন স্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের মাধ্যমে আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক হতে নিজ গৃহে নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে এবং চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার রয়েছে। (সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ)

মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ: সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ মৌলিক অধিকার বলবৎকরণের জন্য সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সংবিধানের ১০২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মামলা রুজু করার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন বা অস্বীকৃতির বিরুদ্ধে নাগরিকগণ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদনের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন।

এগুলোর মধ্যে ছয়টি অর্থাৎ অনুচ্ছেদ ৩২,৩৩,৩৪,৩৫,৪১ ও ৪৪ মৌলিক অধিকার বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিক ও বিদেশীরা ভোগ করতে পারে এবং অবশিষ্ট বারটি অর্থাৎ অনুচ্ছেদ ২৭,২৮,২৯,৩০,৩১,৩৬,৩৭,৩৮,৩৯,৪০,৪২, এবং ৪৩ শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকগণ ভোগ করতে পারবে।

উপরোক্ত মৌলিক অধিকার ছাড়াও আরও কিছু সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে-

— মানুষের উপর মানুষের শোষণ হতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সমতাভিত্তিক সমাজ লাভ করার অধিকার।

— মেহনতি মানুষ কৃষক, শ্রমিক ও অনগ্রসর শ্রেণীসমূহ সকল প্রকার শোষণ হতে মুক্তি পাওয়ার অধিকার।

— অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা পাওয়ার অধিকার।

— কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার।

— যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার।

— সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতা-পিতৃহীন বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাব গ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার।

— আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকার অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা লাভের অধিকার।

— সকল নাগরিক সম্পদের সুষম বণ্টন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমতার অধিকার।

— জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা লাভের অধিকার।

— কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং ‘‘প্রত্যেকের নিকট হতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী” এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভের অধিকার।

— সকল বিষয়ে জনগণের সেবা পাওয়ার অধিকার।

— সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখার ও অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভের অধিকার।

— প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার।

— সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে সমর্থন পাওয়ার অধিকার।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, সমস্ত অধিকার মানুষের প্রকৃতিতে সহজাত ও হস্তান্তর অযোগ্য, যেগুলো পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য জাতি, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ, রাজনৈতিক বা অন্যান্য অভিমত ইত্যাদি নির্বিশেষে সমভাবে প্রযোজ্য ও উপভোগ্য, যেগুলো মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং যেগুলো ছাড়া মানুষ ‘মানুষ’ হিসাবে বেঁচে থাকতে পারে না সেগুলোই মানবাধিকার।

তথ্যসূত্রঃ

— QuranerAlo.com-কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

— বাংলাদেশের সংবিধান;

লেখক : আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত কুমিল্লা।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.